এক অসাধারণ ঔষধি উদ্ভিদ তুলসী

এক অসাধারণ ঔষধি উদ্ভিদ তুলসী

আয়ুর্বেদিক

তুলসী একটি অতি পরিচিত ঔষধি উদ্ভিদ। এটি একটি চিরহরিৎ গুল্ম। তুলসী পাতার অনেক গুণ ও উপকারীতা রয়েছে। তুলসী পাতা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তুলসী বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জন্মে।

 বাংলাদেশেও তুলসী একটি জনপ্রিয় উদ্ভিদ। তুলসী গাছ ছোট এবং ঝোপালো। এর পাতাগুলি ছোট, গোলাকার এবং সবুজ রঙের। তুলসীর ফুল সাদা, গোলাপি বা বেগুনি রঙের হয়।

সাধারণ পরিচিতি ও বিবরণ:

তুলসী একটি ঘন শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ২/৩ ফুট উঁচু একটি চিরহরিৎ গুল্ম। এর মূল কাণ্ড কাষ্ঠল, পাতা ২-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, শাখাপ্রশাখার অগ্রভাগ হতে ৫টি পুষ্পদণ্ড বের হয় ও প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০ টি স্তরে ফুল থাকে।

 প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ছোট ফুল ফোটে। এর পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে। তুলসী গাছ পরিবেশে প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ করে, একারণে একে 'অক্সিজেনের ভাণ্ডার' বলা হয়।

তুলসী পাতার গুণাগুণ:

তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। তুলসী পাতায় ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

তুলসী পাতার কিছু উল্লেখযোগ্য গুণ ও উপকারীতা নিচে আলোচনা করা হলো:
  • সর্দি-কাশি দূর করে: তুলসী পাতা সর্দি-কাশি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। তুলসী পাতা ফুটিয়ে গরম গরম পান করলে সর্দি-কাশি কমে যায়।
  • গলা ব্যথা দূর করে: তুলসী পাতা গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা ফুটিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা কমে যায়।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: তুলসী পাতা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া বা তুলসী চা পান করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: তুলসী পাতা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।
  • হজমশক্তি বাড়ায়: তুলসী পাতা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: তুলসী পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: তুলসী পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: তুলসী পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • মানসিক চাপ কমায়: তুলসী পাতা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্নে: তুলসী পাতা ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয়। তুলসী পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতিকারক উপাদান থেকে রক্ষা করে।
তুলসী পাতার ব্যবহার:

তুলসী গাছের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডা লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঠাণ্ডা ও সর্দিজনিত যেকোনো সমস্যায় তুলসী রস ও মধু একত্রে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এ গাছের রস কৃমি ও বায়ুনাশক।

ঔষধ হিসাবে এই গাছের ব্যবহার্য অংশ হলো এর রস, পাতা এবং বীজ। আয়ুর্বেদ ও ভেষজ চিকিৎসায় তুলসীর ব্যাপক ব্যবহার বয়েছে, বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে।

ভারতে যে চার প্রকার তুলসী গাছ দেখা যায় সেগুলি হলো:

  • বাবুই তুলসী
  • রামতুলসী
  • কৃষ্ণ-তুলসী
  • শ্বেত তুলসী
                                        বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস  

জগৎ/রাজ্য: প্লান্টি (Plante)

গোষ্ঠী: ট্র্যাকিওফাইটস (Tracheophytes)

ক্লেড: অ্যাঞ্জিওস্পার্মস (Angiosperms)

ক্লেড: ইউডিকটস (Eudicots)

গোষ্ঠী: অ্যাস্টেরিডস (Asterids)

বর্গ: Lamiales

পরিবার: Lamiaceae

গণ: Ocimum

L.প্রজাতি: O. tenuiflorum

দ্বিপদী নাম: Ocimum tenuiflorum

জগৎ/রাজ্য: প্লান্টি (Plante)

গোষ্ঠী: ট্র্যাকিওফাইটস (Tracheophytes)

ক্লেড: অ্যাঞ্জিওস্পার্মস (Angiosperms)

ক্লেড: ইউডিকটস (Eudicots)

গোষ্ঠী: অ্যাস্টেরিডস (Asterids)

বর্গ: Lamiales

পরিবার: Lamiaceae

গণ: Ocimum

L.প্রজাতি: O. tenuiflorum

দ্বিপদী নাম: Ocimum tenuiflorum